পৃথিবীতে মানব জাতি আগমণ উঁৎস (পুনঃ প্রকাশ)
লিখেছেন লিখেছেন শেখ সাদী ৩০ জুন, ২০১৩, ০৬:৪০:৪৬ সকাল
পৃথিবীতে মানব জাতি আগমণ করে তিন ভাবে
১ সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টি করে পৃথিবীতে প্রেরণ (Send) করেন । এটা এখন আর হয় না
২ নারী-পুরুষের মিলন (সহবাস) এর মাধ্যমে (পৃথিবীতে যতদিন মানব জাতি থাকবে ততদিন এই পদ্ধতিতে মানুষ জন্ম হবে ।
৩ নারী-পুরুষের মিলন (সহবাস ) ছাড়া । হযরত মরিয়ম আ: এর পুত্র জন্মদান: এটা এখন আর হয় না
এই পৃথিবীতে যত প্রানি আছে সব প্রাণীর মূল ও প্রধান উৎস পানি । “আমরা প্রতিটি জীবন্ত জিনিসকে পানি থেকে তৈরী করেছি । এর পরেও কি তারা বিশ্বাস করবে না । আল কোরআন সুরা আম্বিয়াঃ৩০। পৃথিবীর সৃষ্টির অনেক পরে মানুষ পৃথিবীতে আগমন করে । মানুষকে পৃথিবীতে প্রেরণের পুর্বে পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তোলা হয় ।
“তিনি ভূ পৃষ্ঠকে তোমাদের জন্য নমনীয় করেছেন যার উপর তোমরা বিচরণ কর এবং তাঁর দেওয়া রিযিক উপভোগ কর যা তিনি বিন্যস্ত করে রেখেছেন । অতএব তাঁর প্রতি পুনরুজ্জীবিত হতেই হবে । আল কোরআন সূরা মুলকঃ১৫
পৃথিবীকে মানুষের উপযোগী করার পর আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির ইচ্ছা প্রকাশ করেন । তিঁনি ফেরেশ্তাদের বলেন “আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি , ফেরেশতারা বললো তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা – হাঙ্গামা সৃষ্টি করবে । এবং রক্তপাত ঘটাবে । আল কোরআন সূরা বাকারাহঃ৩০ এরপরে মহান আল্লাহ তাআলা তাদের প্রশ্নের জবাবে বলেন “নিঃসন্দেহে আমি যা জানি তোমরা তা জাননা। আল কোরআন সূরা বাকারাহঃ৩০
এরপর মহান আল্লাহ তাআলা আদমকে সৃষ্টি করেন । ফেরেশ্তাদের নিদের্শ দেন আদমকে সিজদা করার জন্য । তখন সকল ফেরেশ্তাগণ আদমকে সিজদা করে । তবে অহংকারী ইবলীস আদমকে সিজদা করেনি । আল্লাহ তাআলা বলেন "এবং যখন আমি আদমকে সেজদা করার জন্য ফেরেশ্তাগণকে নিদের্শ দিলাম তখন ইবলীস ব্যতীত সবাই সেজদা করলো ", আল কোরআন সূরা বাকারাঃ৩৪।
আদমকে সৃষ্টি করার পর সাথে সাথে তাঁকে পৃথিবীতে সৃষ্টি প্রেরণ করা হয়নি । বরং তাকেঁ জান্নাতে বসবাসের সুযোগ দেয়া হয় । "এবং তার জন্য সঙ্গীনি সৃষ্টি করা হয় । এবং যিনি তার থেকে তার (আদম এর ) সঙ্গিনিকে সৃষ্টি করেছেন" । সুরা নিসাঃ১ জান্নাতে বসবাস সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন , "এবং আমি আদমকে হুকুম করালাম যে তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক । এবং ওখানে যাচাও, যেখান থেকে চাও পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক । কিন্তু কখনো এ গাছের (নিষিদ্ধ গাছের) নিকটবর্তী হয়ো না । তাহলে তোমরা যালিমের অন্তভূক্ত হয়ে যাবে ",আল বাকারাহঃ৩৫।
অতঃপর হযরত আদম আঃ ও তার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে লাগলো । এক সময় তারা উভয়য়ে ইবলীসের ধোঁকায় পড়ে নিষিদ্ধ গাছের নিকট যায় । আর তা হতে ফল ভক্ষণ করে । তারপর মহান আল্লাহ তাআলা তাদের হুকুম দিলেন পৃথিবীতে নেমে আসার জন্য ।" অনন্তর শয়তান তাদের উভয়কে ওখান থেকে পদস্খলিত করেছিল, পরে তারা যে সুখ -স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল তা থেকে তাদের বের করে দিল এবং আমি বললাম তোমরা নেমে যাও "। সুরা বাকারাহঃ৩৭
এভাবেই পৃথিবীতে মানব জাতির আগমন ঘটে । নিচে নেমে যাও বলতে যে পৃথিবীকে বুঝানো হয়েছে তার প্রমান হলো পরবর্তীতে হযরত আদম আঃ ও তাঁর স্ত্রীকে পৃথিবীতে পাওয়া যায় । এবং তাদের মধ্যথেকে পরবর্তিতে পৃথিবীতে মানব জাতি ছড়িয়ে পড়ে । আদম ও তার স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমেই পর্যায়ক্রমে মানুষ বাড়তে থাকে । এর প্রমান বর্তমানেও দেখছি আমাদের বাবা- মা, দাদা- দাদী, নানা- নানী
এর মাধ্যমে আমরা ভাই- বোন, মামা - কাকা পেয়েছি । জন্মের এই পদ্ধতীতো আর অবিস্বাস করা যায় না । পুরুষ ও স্ত্রীর মিলনে যে মানব শিশু জন্ম গ্রহন করে তা বিস্বাসের জন্য ধর্ম , যুক্তি , দর্শন , বিগ্ঘান কোন কিছুর প্রয়োজন হয় না । মানব শিশু যে মানবের থেকে জন্ম গ্রহন করে তা আমাদের চোখ দ্বারা প্রমানিত । জন্মের পরে মানুষ এক জায়গায় অবস্থান করেনি , তারা হিজরত করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে । আর ভ্রমন করা মানুষের একটি স্বভাব । " হে মানব সমাজ তোমরা তোমাদের পালন কর্তাকে ভয় কর । যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার সঙ্গীনিকে সৃষ্টি করেছেন আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগনিত পুরুষ ও নারী" সুরা নিসাঃ ১ ।
পৃথিবীতে মানুষের উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে । এর মধ্যে অন্যতম একটি মতবাদ হল চার্লস ডারউইনের মানব বিবর্তনবাদ তত্ত্বটি এতে বিঙ্গানী জনাব ডারউইন বলেছেন প্রতিটি জীব বিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বলে বর্তমান আধুনিক মানব প্রজাতি বিবর্তনের আওতাভূক্ত এবং আদি primate এর একটি শাখার উন্নত সংস্করনই বর্তমান সুন্দর মানব । বহুকোষী কার্ডাটা chordate পর্বের মেরুদন্ডী ও স্তন্যপায়ী চার পা Legs বিশিষ্ট বানর গরিলা শিম্পান্জি এবং মানুষ প্রাইমেট primate এর অন্তভূক্ত । আদি প্রাইমেট এর বিবর্তনের বিভিন্ন শাখায় কেহ হয়েছে বানর গরিলা শিম্পান্জি এবং সর্বাধিক বিবর্তনের সহায়ক প্রজাতির একটি শাখা মানুষে পরিনিত হয়েছে ।
উনবিংশ শতাব্দির বিঙ্গানীরা ডারউইনের মতবাদটি যুক্তিযুক্ত না হওয়ার কারণে বাতিল করে দিয়েছে । শুধুমাত্র কিছু নাস্তিক বিঙ্গানী ও বুদ্ধিজীবি এ তত্ত্বটি একশ ভাগ মেনে নিয়ে তাদের লিখিত বই পত্রে বর্ণনা করে থাকে ।
আর আজকের আধুনিক যুগের বিঙ্গানীরা বলেন যে মানুষের আদি যুগ ছিল বানর । যা কখনই হতে পারে না ।
কিছু কিছু তথা কথিত বিঙ্গানী ও বুদ্ধিজীবিরা ডারউইনের তত্ত্বটি কে অন্যতম একটি সেরা তত্ত্ব মনে করে ত শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠ দান করে থাকে ।
পৃথিবীতে হযরত আদম আঃ ও তার স্ত্রীকে প্রেরণ করার পর তাদের দুজনের সাধ্যমে ধারাবাহিক ভাবে মানুষকে সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়া হয় ।" হে মানব জাতি আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি পিতৃ ও মাতৃ (জনন কোষ ) থেকে", সুরা হুজরাতঃ১৩
আধুনিক বিঙ্গানী ও বুদ্ধিজীবিরা মাতৃ পিতৃ থেকে যে সন্তান জন্মলাভ করে তার উৎস বা গঠন পক্রিয়া আবিস্কার করতে পারে কিন্তু একদম শূণ্যথেকে পৃথিবীতে মানুষের আগমন কি ভাবে হয়েছে তার কোন প্রমানযোগ্য তথ্য বিঙ্গান দিতে পারেনি । অপর দিকে পবিত্র কোরআন মানুষের আদি উৎস সম্পর্কে সত্যসহকারে আলোচনা করেছে ।
কোরআন হচ্ছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গ্রহণযোগ্য বৈঙ্গানীক বই ও মতবাদ। কোরআনের কোথাও মানুষের আদি উৎস বানর ছিল বা অন্যকোন প্রাণীর উৎস হচ্ছে মানুষ তা বলেনি ।
বরং নুৎফা থেকে মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে তা বলা হয়েছে ।" নিশ্চই আমরা মানুষ সৃষ্টি করেছি সংমিশ্রিত নুৎফা (শুক্রানু ও ডিম্বানু) থেকে ",আল কোরআন,সুরা দাহর । বর্তমান ডাক্তাররা যে শুক্রানু ডিম্বানুর সংমিশ্রনের কথা বলেন তাই হচ্ছে নুৎফা । নুৎফা সৃষ্টি হওয়ার পরেই কয়েকটি ধারাবাহিক পর্যায় সমাপ্ত করে মানব শিশু পৃথিবীতে জন্মলাভ করে ।মানব শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্বে সাতটি স্তর অতিক্রম করে জস্মলাভ করে ।
১. সুলালাহ (সার নির্যাস ) sperm +ovum
২. নুৎফা (প্রজনন কোষ)zygote
৩. আলাক (রক্তপিন্ড)Blastocyst
৪. মুদগাহ(মাংসপিন্ড)Somites
৫. ইযাম(অস্হি)Skeleton
৬. লাহম(মাংসপেশী)Muscles
৭. রুহ(প্রাণ)Foetus
"তিনি আল্লাহ যিনি তোমাদেরকে বিভিন্ন স্তর থেকে সৃষ্টি করেছেন", আল কোরআন সূরা নূহ:১৪
"প্রকৃতপক্ষে,আমরা মানুষ সৃষ্টি করেছি মাটির সার নির্যাস থেকে । পরে তা নুৎফা (জাইগাট ) রুপে একটি সুরক্ষিত আধারে (জরায়ু)স্থাপন করেছি। অত:পর ত জমাট রক্তপিন্ডে (জোঁক সদৃশ বস্তু)রুপান্তর করে লটকে দিয়েছি । তারপর লটকে যাওয়া রক্তপিন্ডকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি । এরপর তাকে অস্থি বানিয়েছি । তারপর অস্থির উপর মাংসপেশী জড়িয়ে দিয়েছি । অবশেষে তাকে একটি ভিন্ন রুপ (পূর্ণশিশু) দান করেছি । সুতরাং তিনি মহামহিম আল্লাহ যিনি সর্বময় মহান স্রষ্টা", আল কোরআন , সুরা মুমিনুন:১২-১৫
আধনিক বিঙ্ঘান টেষ্টটিউব আবিস্কার এর মাধ্যমে সন্তান জন্মলাভের পদ্ধতি আবিস্কার করেছে । এটি গর্ভকালিন একটি পদ্ধতি । মায়ের গর্ভঅবস্থাকে কৃত্রিমভাবে তৈরী । এটা অনেক মেয়ের জন্য আর্শিবাদ কারণ অনেক মেয়ে গর্ভধারন করতে পারে না বা সক্ষম না । ফলে তারা নুৎফা সংগ্রহ করে সন্তান জন্ম গ্রহণ করতে পারবে ।
আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সুন্দরতম অবয়বে । কোন বানরের আকৃতিকে আল্লাহ মানুষ তৈরী করেননি । বরং সুন্দরতম অবয়বে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে ।" আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম অবয়বে",আল কোনআন, সুরা তীনঃ৪ মহান আল্লাহ তাআলা মানুষ সুন্দর ভাবে সৃষ্টি করেছেন একটি উদ্দেশ্যেই ; তাঁর ইবাদত করার জন্য
"আমি মানব ও জীন জাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য",আল কোরআন ।
আর হেদায়াত প্রাপ্ত ও বিবেকবান মানুষ তাই করে । "আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য পার্থনা করি",আল কোরআন,সুরা ফাতেহা:৪
বিষয়: বিবিধ
২৮৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন